Ayodhya Ram Mandir : ১৫২৮ থেকে ২০২৪, ফিরে দেখা ইতিহাসের সেই অধ্যায়
অবশেষে দীর্ঘ ৫০০ বছরের লড়াই শেষ হয়ে ২২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে রাম মন্দিরের। সোমবার দুপুরবেলা নব প্রতিষ্ঠিত রাম মন্দিরের গর্ভগৃহে শ্রীরামের মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী। তবে লড়াইটা এত সহজ ছিল না। ৫০০ বছরের দীর্ঘ ইতিহাস এই মন্দির প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের। হিন্দু-মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায় পাঁচ শতক ধরে চলেছে ব্যাপক টানাপোড়েন। যার আইনি লড়াই শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ ভারতে ১৩৯ বছর আগে। অবশেষে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্বস্তি এসেছিল মন্দিরের দাবীতে আন্দোলনকারীদের মনে। হিন্দুর মন্দিরের উপর তৈরি হওয়া অযোধ্যায় বিতর্কিত বাবরি মসজিদ (Babri Mosque) তৈরির ৪৯৬ বছর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জামানায় দেশের শীর্ষ আদালত জানিয়ে দেয় রামজন্মভূমি অযোধ্যাতে মন্দির হবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কোন পথে কোন কোন সংগ্রামের মধ্যে নিয়ে অযোধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর হাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হতে চলেছে হিন্দুদের প্রিয় ‘রামলালার’:
১৫২৮: বিদেশী আক্রমণকারী হাজিরুল মহম্মদ বাবর ১৫২৬ সালে ভারতে মুঘল রাজ শুরু করলেন কয়েকটি জনপদে। এর ঠিক দুই বছর পর বাবরের সেনাপতি বাকি তাশখন্ডি ওরফে মীর বাকি অযোধ্যায় মন্দিরের ভেঙে তার উপর তৈরি করলেন বাবরি মসজিদ। আঘাত লাগল হিন্দুদের মনে। লড়াইয়ের সেই শুরু। মসজিদ তৈরি হলেও জন্মভূমিস্থলে
১৮৫৮: নিহঙ্গ শিখরা হবন করার ইচ্ছে প্রকাশ করে বিতর্কিত স্থলে ঢুকে পড়ে। গুরু নানক ১৫১০-১১ সালে এই স্থলে এসেছিলেন। তাঁদের বাধা দেওয়া হলে শুরু হয় দুই পক্ষের তীব্র বিবাদ।
১৮৮৫: ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের হাতে পতন হল মুঘল সাম্রাজ্য। আইনি পথে প্রথমবার রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার লড়াই শুরু করলেন মহন্ত রঘুবীর দাস। তিনি ফৈজাবাদের জেলা আদালতে আবেদন করলেন বাবরি মসজিদের বিতর্কিত কাঠামোর বাইরে শামিয়ানা খাটিয়ে ভগবান শ্রী রামের মূর্তি স্থাপনের। যদিও মহন্তের সেই আবেদন খারিজ করে দেয় ব্রিটিশ আদালত।
১৯৪৯: মাত্র দেড় বছর আগে ১৯৪৭ এ স্বাধীন হয়েছে দেশ। আর এর ঠিক দেড় বছরের মাথায় ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এক গভীর শীতার্ত রাতে বাবরি মসজিদের বিতর্কিত মূল গম্বুজের কাঠামোর ঠিক নীচে স্থাপিত হল শ্রীরামের মূর্তি। মন্দির আন্দোলনকারীরা দাবি করলেন শ্রীরাম প্রকট হয়েছেন। আবারও মামলা হল আদালতে। এবার মহন্ত রামচন্দ্র দাস এবং গোপাল সিমলা ফৈজাবাদ আদালতে আলাদা আলাদা মামলা করে বিতর্কিত জায়গায় শ্রীরামের পুজোর অনুমতির আবেদন করলেন।
১৯৫৯: ১৯৫০ এর ঠিক ৯ বছর পর ফের আদালতে দায়ের হল আরও একটি মামলা। এবার ওই বিতর্কিত জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করা হল নির্মোহী আখড়ার তরফে।
১৯৮১: এরপর সরযূ নদী ধারায় বয়ে গিয়েছে বহু জল। এর মধ্যে ১৯৮০ সালে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হলেন বিশ্বনাথপ্রতাপ সিং। তার ঠিক এক বছর বাদে ১৯৮১ সালে উত্তরপ্রদেশ সেন্ট্রাল সুন্নি ওয়াক্ফ বোর্ড আদালতে বিতর্কিত মসজিদের জমির মালিকানা দাবি করে আবেদন করে।
১৯৮৬, ১ ফেব্রুয়ারি: আদালতে নৈতিক জয় হল মন্দিরপন্থীদের। ফৈজাবাদ আদালত রায় দিল বিতর্কিত মন্দিরের কাঠামোর দরজা হিন্দুদের উপাসনার জন্য খুলে দেওয়ার।
১৯৮৯, ১৪ আগষ্ট: ১৯৮৯ সালে যুযুধান দুই পক্ষকে শান্ত করতে স্বাধীনতা দিসবের আগের দিন অর্থাৎ ১৪ই আগষ্ট এলাহাবাদ হাইকোর্ট নির্দেশ দেয় বিতর্কিত জমিতে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার।
১৯৯২, ৬ ডিসেম্বর: রাম মন্দির আন্দোলনের ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত আর রক্তাক্ত দিন। ওই দিন করসেবকরা অযোধ্যার বিতর্কিত কাঠামো ধ্বংস করেন।
৩ এপ্রিল, ১৯৯৩: কেন্দ্রীয় সরকার সংসদে আইন পাশ করানোর পরই অযোধ্যার বিতর্কিত জমির দখল নেয়।
১৯৯৪, ২৪ অক্টোবর: বাবরি মসজিদ সম্পর্কিত আরও এক বড় রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। ঐতিহাসিক ইসমাইল ফারুকির করা একটি মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত রায় দেয় কোনো ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে কোনো একটি মসজিদকে ধরা হবে না।
২০১০, ৩০ সেপ্টেম্বর: অযোধ্যার বির্কিত মসজিদ এবং রাম মন্দির নিয়ে বড় রায় ইলাহাবাদ হাইকোর্টের। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের উপর ভিত্তি করে এলাহাবাদ হাইকোর্টের তিন বিচারকের ডিভিসন বেঞ্চ রায় দেয় ওই বিতর্কিত জমি সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রাম মন্দির ট্রাস্টের মধ্যে তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।
২০১১, ৯ মে: ইলাবাদ হাইকোর্টের তিনভাগে জমি ভাগ করার রায়ে স্থগিতাদেশ দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
২০১৭, ২১ মার্চ: তৎকালীন চিফ জাস্টিস অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর এক রায়ে জানালেন অযোধ্যার বিতর্ককে আইন আদালতের বাইরেই দুপক্ষের সম্মতিতে মীমাংসা করে নেওয়ার কথা।
২০১৭, ৭ আগষ্ট: বিচারপতি খেহরের মন্তব্যের পর ফের অযোধ্যা মামলার শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্ট তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করে।
২০১৭, ২০ নভেম্বর: অযোধ্যায় রাম মন্দির বানানো নিয়ে আপত্তি না থাকার কথা জানানো উত্তরপ্রদেশ শিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড। যদিও শর্ত দিল অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি হলে লখনউতে বানিয়ে দিতে হবে মসজিদ।
২০১৭, ৫ ডিসেম্বর: আবার নতুন করে অযোধ্যা মামলার শুনানি শুরু হল। এবার প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অশোকভূষণ এবং বিচারপতি এস আব্দুল নাজিরের বেঞ্চে নতুন করে মামলার শুনানি শুরু হল।
২০১৮, ২৯ অক্টোবর: এবার দেশের প্রধান বিচারপতি পদে আসীন হলেন রঞ্জন গগৈ। তাঁর নেতৃত্বে অযোধ্যা মামলার শুনানির জন্য নতুন করে ফের গঠিত হল তিন বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চ।
২০১৯, ৮ জানুয়ারি: আবারও বদল হল তিন বিচারপতির বেঞ্চ। আগের বেঞ্চের কেউ হলেন অসুস্থ, কেউ বা সরে দাঁড়ালেন। ফলে এবার রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে তৈরি হল পাঁচ বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চ।
২০১৯, ৮ মার্চ: সুপ্রিম তৈরি করল মধ্যস্থতা প্যানেল। এবার বিচারপতি এফএম কলিফুল্লা, গুরু রবিশঙ্কর এবং আইনজীবি শ্রীরাম পঞ্চুকে নিয়ে তৈরি করা হল এই প্যানেল।
২০১৯, ২ আগষ্ট: ব্যর্থ হল এই মধ্যস্থতা প্যানেল। বাধ্য হয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানালেন ওই বছরের ৬ আগষ্ট থেকে অযোধ্যা মামলার শুনানি হবে রোজ।
২০১৯, ১৮ সেপ্টেম্বর: এক মাসের সময়সীমা বেধে দিয়ে ফের মধ্যস্থতা কমিটিকে নতুন করে আলোচনা শুরু করতে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
২০১৯, ১৬ অক্টোবর: তিতিবিরক্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নির্দেশ দিলেন ১৬ অক্টোবরের মধ্যেই শেষ করতে হবে অযোধ্যা মামলার শুনানি।
২০১৯, ৯ নভেম্বর: ঐতিহাসিক রায় দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। পরিষ্কার জানিয়ে দিল অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে তৈরি হবে শ্রীরামের মন্দির। তবে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে মুসলিম সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে দেওয়া হবে পাঁচ একর জমি।
২০১৯, ১২ ডিসেম্বর: আবারও বড় সিদ্ধান্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের। বিতর্কিত অযোধ্যার জমি সংক্রান্ত রায়ের মামলায় একাদিক আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
২০২০, ৫ ফেব্রুয়ারি: ক্ষমতায় ফিরে প্রধানমন্ত্রীর বড় পদক্ষেপ। কেন্দ্রীয় কেবিনেটের অনুমোদন পেল শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। বর্তমান রামমন্দির নির্মাণের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এই ট্রাস্ট। ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লোকসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওই অনুমোদনের কথা ঘোষণা করলেন।
২০২০, ২৪ ফেব্রুয়ারি: উত্তরপ্রদেশ সরকার প্রদত্ত মসজিদের জন্য জমি গ্রহণ করল সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড। অযোধ্যার সোহাওয়াল তহশিলে ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দিল যোগী সরকার।
২০২০, ৫ আগষ্ট: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাম মন্দিরের ভিত্তি স্থাপনের আগে ভূমি পুজো করলেন অযোধ্যায়। তারপর মোদীজি রাম মন্দিরের আনুষ্ঠানিক ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেন রূপোর ইঁট দিয়ে।
২০২৪, ২২ জানুয়ারি: অবশেষে সমস্ত লড়াই শেষ, শেষ হল শবরীর দীর্ঘ প্রতীক্ষা। সমস্ত জটিলতা, সমস্ত বিতর্ক শেষে আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে রামলালার। প্রায় ১০ হাজার বিশেষ অতিথির সামনে এদিন মন্দির উদ্বোধন তথা প্রাণ প্রতিষ্ঠা করবেন মাননীয় নরেন্দ্র মোদী। ইতিহাসের সাক্ষী হল গোটা দেশের পাশাপাশি গোটা পৃথিবীও।
Trending Tag
Ayodhya Ram Temple : গর্ভগৃহে উপবিষ্ট রামলালা, প্রকাশ্যে এল প্রথম ছবি
Mohan Bhagwat In Ayodhya : রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে অযোধ্যায় পৌঁছলেন মোহন ভাগবত
Ayodhya Ram Mandir : রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর
Ram Temple Security : মন্দির উদ্বোধনের আগে কড়া নিরাপত্তা অযোধ্যায়
Ram Temple : রামমন্দির উদ্বোধনের আগে রাষ্ট্রপতিকে বার্তা মোদীর
Modi at Ayodhya : প্রাণপ্রতিষ্ঠা শেষে রামলালার পায়ে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম প্রধানমন্ত্রীর
Ayodhya Ram Mandir : ১৫২৮ থেকে ২০২৪, ফিরে দেখা ইতিহাসের সেই অধ্যায়
Mohan Bhagwat : অযোধ্যায় রামলালার সঙ্গে ভারতের আত্মাও ফিরে এসেছে : মোহন ভাগবত
Ayodhya Ram Mandir : সর্বসাধারণের জন্য খুলল রাম মন্দিরের দরজা, পুণ্যার্থীদের ঢল অযোধ্যায়
Gyanvapi Mosque : জ্ঞানবাপী মসজিদের নিচে ছিল মন্দির! জানাল ASI
Gyanvapi Mosque : জ্ঞানবাপীতে ‘শিবলিঙ্গ’, ভাঙা মূর্তি! সমীক্ষার রিপোর্ট মানতে নারাজ মসজিদ কমিটি
Gyanvapi Mosque : "এগুলি ফিরিয়ে দিলে হিন্দুরা আর কোনও মন্দিরের দিকে তাকাবে না"
Kamakhya Corridor : রামমন্দিরের পরেই কামাখ্যা করিডরের শিলান্যাস করবেন মোদী
Abudhabi Swaminarayan Temple : অযোধ্যার পর এবার হিন্দু মন্দির আরবে !